ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সন্তান ফায়ারম্যান রানাকে বাঁচাতে রক্ত দিচ্ছেন সহকর্মীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০১৯
  • ২১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। বর্তমানে তাকে সিএমএইচের আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন তার শরীরে চার থেকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হচ্ছে। একাজে এগিয়ে এসেছেন রানার সহকর্মীরা। তাকে বাঁচাতে সিরিয়াল করে নিজেদের রক্ত দিয়ে আসছেন তারা। তবে আরও রক্তের প্রয়োজন হলে দেশবাসীর সহায়তা চেয়েছেন কুর্মিটোলার ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বজলুর রশীদ। এইসঙ্গে রানার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

আহত সোহেল রানার সর্বশেষ অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হলে সোমবার (১ এপ্রিল) বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমি এখন সিএমএইচে রয়েছি। সোহেল রানার এক মামাকে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসক দুপুরে সোহেল রানার স্বাস্থ্যের অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা আমাকে জানাবে।’

চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অপারেশনের পর থেকে এ পর্যন্ত সোহেল রানাকে অন্তত ১৮ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ব্যাগ করে রক্তের প্রয়োজন। রানার রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভি’। আমাদের সদর দফতর ও স্টেশনের সহকর্মীদের যাদের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলছে, এখন পর্যন্ত তারাই তাকে রক্ত দিয়ে আসছি। প্রতিদিন আমরা চার-পাঁচজনকে স্ট্যান্ডবাই রাখছি। যদি আরও রক্তের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চাইবো। দেশবাসীর কাছে আমি তার জন্য দোয়া চাচ্ছি। সে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’

যেভাবে আহত হয়েছিলেন সোহেল রানা

বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভাতে ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছিলেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বজলুর রশীদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন তিনি।

বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেই বড় স্বয়ংক্রিয় মই (লেডার) দিয়ে ভবনে পানি দিচ্ছিলাম। লেডারে করে আটকে পড়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনছিলাম। সোহেল রানা একটি লেডারে ছিল। একটি লেডারে সর্বোচ্চ চার থেকে ছয়জন লোক ধরে। এর বেশি আনা যায় না। সোহেল রানা এবং আরও দুজন ফায়ারম্যান একটি লিডার নিয়ে আটকে পড়া কয়েকজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু লেডারে জায়গা হচ্ছিল না। আটকে পড়াদের জায়গা করে দিতে সোহেল রানা লেডারের সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছিল। কিন্তু লেডারটি যখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের দিকে নেমে আসছিল, তখনই হঠাৎ করে সোহেল রানার পা মইয়ের ভেতরে আটকে গিয়ে ভেঙে কয়েক ভাগ হয়ে যায়। একই সময়ে চাপ লেগে তার পেট ছিদ্র হয়ে যায়। তার পেটের নাড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রানাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার পায়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। পেটের অপারেশনও সফল হয়েছে। তবে এখনও পুরো শঙ্কামুক্ত না। চিকিৎসকরা বলেছেন— সোহেল রানা উন্নতি করছে। সময় লাগবে।’

কিশোরগঞ্জের সন্তান সোহেল রানা

সোহেল রানার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায়। বাবা নুরুল ইসলাম ও মা হালিমা খাতুন। রানার আহত হওয়ার খবর পেয়ে পুরো পরিবার ঢাকায় চলে এসেছেন। কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে তাদের রাখা হয়েছে। চার ভাই একবোনের মধ্যে রানা দ্বিতীয়। মা হালিমা খাতুন ছেলের এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখে মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার, জানালেন বজলুর রশীদ।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সন্তান ফায়ারম্যান রানাকে বাঁচাতে রক্ত দিচ্ছেন সহকর্মীরা

আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। বর্তমানে তাকে সিএমএইচের আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন তার শরীরে চার থেকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হচ্ছে। একাজে এগিয়ে এসেছেন রানার সহকর্মীরা। তাকে বাঁচাতে সিরিয়াল করে নিজেদের রক্ত দিয়ে আসছেন তারা। তবে আরও রক্তের প্রয়োজন হলে দেশবাসীর সহায়তা চেয়েছেন কুর্মিটোলার ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বজলুর রশীদ। এইসঙ্গে রানার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

আহত সোহেল রানার সর্বশেষ অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হলে সোমবার (১ এপ্রিল) বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমি এখন সিএমএইচে রয়েছি। সোহেল রানার এক মামাকে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসক দুপুরে সোহেল রানার স্বাস্থ্যের অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা আমাকে জানাবে।’

চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অপারেশনের পর থেকে এ পর্যন্ত সোহেল রানাকে অন্তত ১৮ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ব্যাগ করে রক্তের প্রয়োজন। রানার রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভি’। আমাদের সদর দফতর ও স্টেশনের সহকর্মীদের যাদের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলছে, এখন পর্যন্ত তারাই তাকে রক্ত দিয়ে আসছি। প্রতিদিন আমরা চার-পাঁচজনকে স্ট্যান্ডবাই রাখছি। যদি আরও রক্তের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চাইবো। দেশবাসীর কাছে আমি তার জন্য দোয়া চাচ্ছি। সে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেই এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’

যেভাবে আহত হয়েছিলেন সোহেল রানা

বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভাতে ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছিলেন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বজলুর রশীদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন তিনি।

বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেই বড় স্বয়ংক্রিয় মই (লেডার) দিয়ে ভবনে পানি দিচ্ছিলাম। লেডারে করে আটকে পড়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনছিলাম। সোহেল রানা একটি লেডারে ছিল। একটি লেডারে সর্বোচ্চ চার থেকে ছয়জন লোক ধরে। এর বেশি আনা যায় না। সোহেল রানা এবং আরও দুজন ফায়ারম্যান একটি লিডার নিয়ে আটকে পড়া কয়েকজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু লেডারে জায়গা হচ্ছিল না। আটকে পড়াদের জায়গা করে দিতে সোহেল রানা লেডারের সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছিল। কিন্তু লেডারটি যখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের দিকে নেমে আসছিল, তখনই হঠাৎ করে সোহেল রানার পা মইয়ের ভেতরে আটকে গিয়ে ভেঙে কয়েক ভাগ হয়ে যায়। একই সময়ে চাপ লেগে তার পেট ছিদ্র হয়ে যায়। তার পেটের নাড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রানাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার পায়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। পেটের অপারেশনও সফল হয়েছে। তবে এখনও পুরো শঙ্কামুক্ত না। চিকিৎসকরা বলেছেন— সোহেল রানা উন্নতি করছে। সময় লাগবে।’

কিশোরগঞ্জের সন্তান সোহেল রানা

সোহেল রানার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায়। বাবা নুরুল ইসলাম ও মা হালিমা খাতুন। রানার আহত হওয়ার খবর পেয়ে পুরো পরিবার ঢাকায় চলে এসেছেন। কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে তাদের রাখা হয়েছে। চার ভাই একবোনের মধ্যে রানা দ্বিতীয়। মা হালিমা খাতুন ছেলের এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখে মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার, জানালেন বজলুর রশীদ।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন